বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু উপজেলা) ও বগুড়া-৬ (সদর উপজেলা) আসনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম রেকর্ড গড়েছেন। অতীতে বড় দলের প্রার্থীগণ একাধিক আসনে প্রতিদন্দ্বিতা করলেও বগুড়ায় তথা দেশে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী একই সঙ্গে দুই আসনে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। বগুড়ার উপনির্বাচনে এবার হিরো আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দুটি আসনে ভোটে দাঁড়িয়েছেন।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বরে দলীয় সিদ্ধান্তে বিএনপির সাংসদগণ পদত্যাগ করায় বগুড়ার দুটি আসন শূন্য হয়ে পড়ে। এই শূন্য আসনে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পর থেকেই আলোচিত হয়ে আসছিলেন আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। প্রথম জাতীয় পার্টির মনোন্নয়ন পেতে চেষ্টা করেন হিরো আলম, পরে আওয়ামী লীগ থেকেও না পেয়ে অবশেষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। নিবাচন অফিস কর্তৃক ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী হিরো আলম বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ আসনের প্রার্থী হয়ে মনোন্নয়নপত্র জমা দেন বগুড়া রিটানিং অফিসারের কাছে।
এরপর মনোন্নয়ন যাচাই বাছাই শেষে হিরো আলমের দুটি আসনের মনোন্নয়ন বাতিল ঘোষণা করেন জেলা রিটার্নিং অফিসার। এরপর হিরো আলম গত ১৫ জানুয়ারিতে রোববার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়। অবশেষে হিরো আলম উচ্চ আদালতে আপিল করেন। সেই আপিলে হিরো আলম দুটি আসনের মনোন্নয়ন বৈধ ঘোষণা করে রায় পান তিনি। সেই রায়ে ১৮ জানুয়ারিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের নিকট থেকে গত বুধবার দুপুরে একতারা প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামেন আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম।
এর আগে দুপুর ১২টায় হিরো আলম সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসানের নিকট জেলা নির্বাচন অফিসে তার রায়ের কপি জমা দেন। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসেন। প্রতীক বরাদ্দের পর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম হিরো আলমকে অদম্য হিরো আলম বলে উল্লেখ করে বলেন, হিরো আলমের মানসিক জোর দারুণ। তার জন্য শুভকামনা রইল এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিচ্ছি।
বগুড়া-৬ (সদর উপজেলা) আসনে হিরো আলম সরকারদলীয় প্রার্থীসহ ১০ জন প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্যদিকে বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম -কাহালু উপজেলা) আসনে মহাজোটের জাসদ প্রার্থীসহ ৮ জনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হিরো আলম।
হিরো আলম জীবনের প্রথমে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সদস্যর নির্বাচন করেছেন। এরপর গত ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবাচনে বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু উপজেলা) আসনে নির্বাচন করেন।
আজ উপনির্বাচনে ভোট প্রদান শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের হিরো আলম বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ সুন্দর আছে। কাহালু-নন্দীগ্রামে খোঁজ নিয়েছি আমার অবস্থান ভালো আছে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারও বাড়বে। বগুড়া-৬ আসনে গোলমালের আশঙ্কা করেছিলাম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে আমি আশা করি। এর আগে ফজর নামাজে বিজয়ী হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি।
বগুড়া প্রেসক্লাবসহ সভাপতি ও সিনিয়র সাংবাদিক ইতিহাস লেখক আব্দুর রহিম বগরা জানান, স্বাধীনতার পর বগুড়া বা দেশে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে কখনো কেউ হিরো আলমের মতো দুটি আসনে নির্বাচন করেনি। একমাত্র হিরো আলম একজন হয়ে বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ আসনে ভোট করে ইতিহাস তৈরি করলেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রধানগণ একাধিক আসনে নির্বাচন করার ইতিহাস আছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দুটি আসনে ভোট করার ইতিহাস ছিল না।
হিরো আলমের সেই নতুন ইতিহাস গড়া নির্বাচনে ভোটগ্রহণ সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হয়েছে। তবে ভোটারদের উপস্থিতি কম। ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ করতে বগুড়া প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।